প্রাক্তন: তুমি চৌরাস্তার মোড়ে? কী করছো দাঁড়িয়ে?
দিপা: হঠাৎ চেনা কণ্ঠে, চেনা শব্দে ঘুরে তাকালো।
প্রাক্তন: কিছু জিজ্ঞেস করেছি? নাকি অভিমান পুষে পাহাড় ডিঙিয়েছ?
দিপা: তোমার সাথে আমার আর এমন কোন কিছু নেই, যার জন্য অভিমান করে বসে থাকবো।
প্রাক্তন: এই সন্ধ্যেবেলা একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক তোমায় মানায় না, দিপা।
দিপা: তোমার বুঝি খুব মানায়, এই ভর সন্ধ্যেবেলা একা পেয়ে একটা অচেনা অজানা অপরিচিতা মেয়ের সাথে কথা বলতে?
প্রাক্তন: অপরিচিতা বোধ হয় নও! তবে কি আমায়
‘তুমি’ সম্বোধন করতে?
দিপা: তোমার বাবা ঠিকই বলেছিলেন, সব ছেড়ে উকিল হয়ে যা, তোর সাথে যুক্তিতে পারা যাবে না।
প্রাক্তন: বাবা যত না বলতো, তার চেয়ে তো বেশিই বলতে তুমি।
আচ্ছা, দিপ!
দিপা: প্লিজ, যে নামটার সময়টাই পাল্টে গেছে সে নামটা আর উচ্চারণ করে আমাকে দ্বিধায় ফেলো না। প্লিজ!
প্রাক্তন: চলো বসি কোথাও? চা খাবে? কোল্ড কফি? অথবা পপকর্ন?
দিপা: এসব খোঁজ, ছোট ছোট পছন্দ, চার দেয়ালের বাইরের জীবনটা যদি দেখাতে তাহলে নিশ্চয়ই আজকে আমাকে তোমার প্রশ্ন করতে হতো না। বরং আমিই অধিকার দেখাতাম, বায়না ধরতাম।
প্রাক্তন: জানো তো দিপ, সরি দিপা! কাছের মানুষ হারিয়ে গেলে ঠিক কতোটা খারাপ লাগে তা আমি আজকে বুঝি। আমাদের প্রতিদিনই দেখা হয়, চোখে চোখ রাখলেও তা ভালোবাসার নয়।
আমার চোখ নত হয় লজ্জায় আর তোমার চোখ ঘুরে তাকায় তিরোস্কারে।
দিপা: আমাকে যেতে হবে, তাড়া আছে। বাসায় চিন্তা করবে, তোমার মতো তো নয়।
কোথাও যেতে চাইলে হাতে টাকা গুজে দিয়ে বলতে যাও ঘুরে আসো ভালো লাগবে। জানো, আমি সেই দিন গুলোতে কোথাও যাইনি, খোলা আকাশ, আর সবুজের কাছে যেতাম।
মুক্ত হতে আর প্রানবন্ত হতে।
আমার জন্য কান্না এতোটা সহজ ছিলো না,বুকের ভেতর পাহাড় চাপা কষ্ট নিয়ে হেসে বেড়াতাম, দেখিয়ে বেড়াতাম সুখেই আছি। সেই অভিনয়টাই বা করতে দিলে কই!!
প্রাক্তন: থাক না। লজ্জিত আমি নিজের কাছে, তোমার কাছে, আমাদের ভালোবাসার কাছে। প্রতিদিন তোমার হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয়েও তোমার হাত ছেড়েছি মাঝ পথে।
দিপ, চলো আজ হাত ধরে এই শুনশান রাস্তায় আবার হাঁটি, আগামীর স্বপ্ন দেখি!?
দিপা: আমাকে সত্যি যেতে হবে। কাছে রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে যে মাঝপথে ছেড়ে চলে যায়, তাকে আমার প্রয়োজন নেই।
এই তো আছি, একা একা স্বপ্ন দেখি, একা একা বাঁচি।
তুমি নেই তো কী হয়েছে, পুরোনো তুমিটাই আছো অনেক কাছাকাছি। আমি চললাম …
দিপারা চলে গেলেও প্রাক্তনরা আর অধিকার নিয়ে আটকাতে পারে না।
কারণ ভালোবাসাহীনতা, অবহেলা তাদের অধিকার বোধটাকে মৃত ঘোষনা করে।
দিপা চলে যায় অন্ধকারে মিলিয়ে …
আর এদিকে তার চোখে বোবা কান্না সে পুরুষ বলে,
হৃদয়ের রাজপথে শিমুল ঝড়ায় আগুন।
শরৎ মেঘে হঠাৎ বৃষ্টি ঝড়ে, মেঘের গর্জন
শোনেনা প্রেমিক মন, চেয়ে চেয়ে হারিয়ে ফেলে দিপ।
সত্যিকারের জীবন প্রদিপ।
এই কাক ডাকা শহরে,
তুই রাস্তায় ছেঁড়া ময়লা।
এই জং ধরা চেনা গলিতে
যত জমে থাকা কালো কয়লা।
তোর অভিনয় মাখা চোখ
তোর হিংস্রতার অনুবাদ
তোর অভিশাপে ভরা হাসি
তোর জীবনের অনুতাপ।
তুই দেখে নিস কত হৃদয়ের
কত ভাঙচুর, ভাঙা গল্প
সব রয়ে যাবে তোর মগজে
নত হতে হবে নয় বিকল্প।
তোর মুখে বিষ, ফুটে চিৎকার
হৃদয়েই শুধু হাহাকার।
অতৃপ্ত আত্মায় গড়া
মানব শরীর অঙ্গার।
ঠিক দেখে নিস তুই কাঁদবি
আমি হাসবো অট্টহাসি
তুই বেঁচে বেঁচে মরবি শুধু
দেখবি মৃত লাশ, পড়বি ফাঁসি।
তোর জন্য চিলেকোঠায় যে পাখিটা বসে,
আমার পায়ের শব্দ শুনে ফুরুৎ করে উড়ে যায়,
সে পাখিটা তোর জন্য নয়।
নিশ্চয়ই তোর হলে,
আমার পায়ের শব্দ শুনে হতো জড়োসড়ো।
একটু দুরে সরে গিয়ে লাজুক হতো বড়।
জবা ফুলের ডালে,
যে ফুলটা দুলছে হাওয়ায়
রক্ত মাখা রঙের মতো,
হাওয়ার তালে তালে।
তুই ভাবছিস, ওটা তোর?
আমি বলছি শোন,
ওই জবাটা অন্য প্রেমিক মন।
রক্তজবা তুইতো আমার,
প্রেমিকার মতো ফুল।
দোল লাগানো পাতায় পাতায়
আবোল তাবোল বোল।
রোদ পোহাবি মাঘের শীতে?
বিকেলের রোদ্দুরে?
তোর উঠোন জুড়ে রোদ মাখানো ঘাস।
আমি আপন মনে তোর ওটা নয়
ভেবে করছি উপহাস।
খোলা মাঠ দেখেছিস তুই?
আকাশ থেকে সূর্য ঝড়া রোদ!
তোর উঠোনের ঐটুকুও আমার মনের বোধ।
পাখির ডানার মতোন ওড়না
উড়াস রোজ,
ভাবলি বুঝি মুক্ত হলি
কেউ রাখেনি খোঁজ।
অধিকারে জাপটে রাখি
এই পৃথিবীর আলোর মায়ায় তোকে আমি
বুকের ভিতর আগলে রাখি।
সাতরঙা ওই রংধনুটা তোর
নিখোঁজ হলে জানবি আমিই সকাল, ভোর।