পাড়া গায়ের সেই শান্ত ছেলেটা, যার সরলতার নিমিত্তে সবাই পঞ্চমুখ
ঘরের কোণে, বইয়ের সাথেই যার সন্ধি।
বিধবা মায়ের পাশে শুয়ে, ঘুণপোকাদের কাঠ কাটার নিরবধি শব্দে
যার ঘুম এসে যেত, তার হঠাৎ এমন কী হলো?
সেদিন রেডিওতে কখন যেন বঙ্গবন্ধুর এক ভাষণ শুনেছে___
তখন থেকেই ওর পাগলমি শুরু হয়েছে, সে নাকি যুদ্ধে যাবে___
আচ্ছা এটা কি ওর মতো বাচ্চাদের কাজ? বয়স তো সবে ষোল কি সতের হবে হয়তো
এখনি রক্তের আগুনের উত্তাপ সে কি পায়? শান্ত রক্তে শোষণের
বাঁধভাঙা ঢেউ, বঙ্গবন্ধুর অগ্নি ঝরা ভাষণের তেজ
তার বক্ষেও কী পৌছায়? ঐ কন্ঠের ধ্বনি কি এতই তীক্ষ্ণ!
শেষ পর্যন্ত ছেলেটি সেদিন ঠিকই গিয়েছিল
মৃত্যুর সাথে খেলার আহ্বান, আত্মার ডাক সে ফেরাতে পারেনি
বজ্রকন্ঠের আহ্বানে, মাতৃভূমির মুক্তির দাবি নিয়ে ঘর ছেড়েছিল ছেলেটি
যেদিন সে যাবে, তার বিধবা মায়ের সে কি কান্না!
বারবার আকুতি-মিনতি করে যাচ্ছে- বাবা তুই যাসনে,
যাসনে খোকা, আমাকে একা করে যাসনে……….
ছেলেটা খুব বেশি কিছু বলতে পারল না, শুধু বলল-
মা, এক মাকে কষ্টে রেখে অারেক মাকে নিয়ে কি সুখে থাকা যাবে?
সেদিন ছেলেটি যেমন মাকে কাঁদিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল আজও সেই কাঁদিয়েই বাড়ি ফিরে এসেছে
কয়েকজন কাঁধে করে নিয়ে এসেছে তার প্রাণহীন, নিথর দেহ
আজও বিধবার কান্না দেখে কে!
আজকের কান্নার তীব্রতা সেদিনের থেকে কয়েকগুণ বেশি
সেদিনের কান্নার অন্ত ছিল, সুপ্ত আশা-অপেক্ষা ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল ফিরে আসার
আজ তার কিছুই নেই। আজ শুধু আছ–
গলা ফাটানো চিৎকার, আর্তনাদ আর সর্বহারা মায়ের অসমাপ্ত হাহাকার