অঙ্কন শিক্ষা ডেস্ক :: দীর্ঘ এক দশকের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সেশনজটের মাত্রা কমে চলে এসেছিল শিক্ষার্থীদের কাছে অনেকটাই সহনীয় মাত্রায়। তবে মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে দীর্ঘ মেয়াদী সেশনজটের আশঙ্কা এখন হাজারও শিক্ষার্থীর সামনে। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে অনলাইনে ক্লাস নিলেও সঙ্কটের পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে না। আবার চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আটকে যাওয়ায় চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না। ফলে মানসিক ভাবে দুর্বল ও অনিশ্চিয়তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই। এমতাস্থায় দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করছেন শিক্ষাবিদরা।
দেখা দিয়েছে ৬ মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ ছুটি চলার ফলে সব বিভাগে ছয় মাস থেকে প্রায় এক বছর পর্যন্ত সেশনজটে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি ছয় মাস সেশনজট হয়, তবে এই ছয় মাসের সেশনজট কমাতে অন্তত দুই (০২) বছর সময়ও লাগতে পারে। আর সেশনজট যদি এক বছর হয়, সেশনজটবিহীন ক্যাম্পাস পেতে সময় লাগবে অন্তত চার (০৪) বছর। এমন শঙ্কা প্রকাশ করে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনুভা তাহসিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ইতোমধ্যে সেশনজটে পড়ে গেছি। নভেম্বর মাসে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। নয় মাস তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। আবার ক্যাম্পাস খুললে পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু খোলার সাথে সাথেই পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে আমরা নই। পরীক্ষা না হলে আবার সেশনজটে পড়ে থাকবো। সবকিছু মিলিয়ে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন যাচ্ছে’।
দীর্ঘমেয়াদী সেশনজটের কবলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগ। একদিকে উত্তরাধিকারী সূত্রে পাওয়া সেশনজট অন্য দিকে মহামারী করোনার দুর্ভোগ, সব মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সেশনজটের কবলে চবির ১০ টি বিভাগ। বিভাগগুলো হচ্ছে, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইংরেজি, নাট্যকলা, সংস্কৃত, প্রাণিবিদ্যা, ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, গণিত, মেরিন সায়েন্সেস, ওশোনোগ্রাফি, ফিজারিজ এবং স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়ার হতাশায় ভুগছেন এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। করোনা ছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সেশনজটের জন্য শিক্ষকদের গাফিলতি ও অবহেলাই বড় করে দেখছেন তারা। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা না হওয়া, পরীক্ষার ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতাকে সেশনজটের প্রধান কারণ বলে মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্কৃত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ২৩ (তেইশ) মাস ধরে একই বর্ষে আছি! বিভাগ কর্তৃপক্ষ কোনো সমস্যা ছাড়াই পরীক্ষা পিছিয়েছেন বারবার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। করোনার কারণে না দিতে পারছি ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা , না হচ্ছে অনলাইন ক্লাস। অথচ শিক্ষকরা চাইলে করোনার আগে আমাদের পরীক্ষা নিতে পারতেন। এখন দীর্ঘমেয়াদী সেশনজট আমাদেরকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে’।
মহামারী করোনা ভাইরাস প্রকোপ বিস্তার রোধে ছুটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা চলছিল। বেশির ভাগ বিভাগ সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করলেও কিছু বিভাগের পরীক্ষা মাঝামাঝিতে এসে আটকে যায়। এ রকম রয়েছে ২০ বিভাগের প্রায় ৩৫ বর্ষ। তবে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় আটকে যাওয়াতে বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না তারা। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ও জগন্নাথ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সঙ্কট যে দিকে যাচ্ছে তাতে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণের তাগাদা দিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব অধ্যাপক এম সেকান্দার খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি বছর যে পিছিয়ে যাচ্ছে সেটি এক বছরের মধ্যে যাতে সমন্বয় করা যায় সে জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যদি এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা না যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে নানাবিদ সমস্যা তৈরি হবে। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও এক্সট্রা ক্লাস নিয়ে কোর্সগুলো সমাপ্ত করতে হবে। দরকার হলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার দিকে যেতে হবে’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সদিচ্ছা আছে। আগামী ১৫ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিল। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর অনলাইন ক্লাস চলছে। কোর্সগুলোও শেষ করা হচ্ছে। ক্যাম্পাস খুললে সব বিভাগে পরীক্ষা নেওয়া যাবে’।
করোনায় সেশনজটের ধাক্কা মোকাবেলা করতে কোনো ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান খোলার পরপরই শিক্ষা ক্যালেন্ডার সমন্বয় করে বেশি বেশি ক্লাস ও বেশি সময়ে ধরে ক্লাস নিয়ে সমস্যা কাটানো সম্ভব হবে। প্রয়োজনে শুক্রবার ও শনিবারেও ক্লাস নেওয়া হবে। একেবারে দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কট না হলে আমরা দ্রুতই সঙ্কট পুষিয়ে নিতে পারব’।
সূত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ