আমরা দিন দিন বড়োই স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি।
কি! বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? খুলে বলবো? আচ্ছা প্রমাণ দিই। ১৯৪৭ এর পর থেকে ৭১ পর্যন্ত এই দেশের প্রতিটি মানুষের উপর দিয়ে চলে নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার। লক্ষ্য করুন, আমি বলেছি, দেশের প্রতিটি মানুষের উপর। শব্দটা মাথায় রাখবেন। পাক বাহিনী বাঙালি নারীদের ঘরে প্রবেশ করে বিবস্ত্র করে অত্যাচার করতো। ধর্ষণ করেই থামতো না। ধর্ষণের পর আরো কিছু অমানবিক কাজ করতো যা আমি লিখতেও পারবো না। তারা কি পুরুষদের ধরে ধরে চুমু দিতো?
অবশ্যই না। পুরুষদেরও অত্যাচার করতো। গৃহহীন করে ফেলতো সবাইকে। কেউ কোনো নিস্তার পেতো না। শান্তিতে মনের কথাগুলো বাঙলা ভাষায় বলতেও পারতো না। কেউ রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করলে ফল কি হতো জানেন? ভয়ংকর মৃত্যু! সরাসরি সুট করা হতো, না হয় জীবিত অবস্থায় গলা কেটে দেয়া হতো, লাঠি দিয়ে অতর্কিত হামলা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, বোমা নিক্ষেপ আরো অনেক অমানবিক অত্যাচার। এসব কি তাদের দমিয়ে রেখেছিলো? রাখেনি! নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তারা আন্দোলনের বের হতো। সবাই এক হয়ে মরে যেতো।
এই কাহিনীগুলো আমরা সবাই ইতিহাস ঘেটে জেনেছি। আশা করি এইসব কিছু মিথ্যে ছিলো না। তাহলে প্রশ্ন হলো, এখন কেনো দেশের প্রতিটি মানুষ আন্দোলনে নামছি না? অবাক হলেন তেমন কিছুই কিন্তু বলিনি আগে যে শব্দটা মাথায় রাখতে বললাম এটাই এখানে প্রয়োগ করলাম। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেনো সবাই এক হচ্ছে না? যেখানে আগে ৭১ এ মাঠে নামা মানেই মৃত্যু নিশ্চিত এবং তাদের এই আন্দোলনে পাক বাহিনী কিন্তু হুচট খায়। দাবী মানতে বাধ্য হয়। এখানে তো তা হচ্ছে না বা হলেই কেনো মাঠে নামবে না! সমস্যাটা কোথায় ঠিক ধরতে পারছেন? সমস্যাটা হচ্ছে তখন অত্যাচারিত হতো সবাই। দেশের সব মানুষ। আর এখন অত্যাচারিত হচ্ছে কেবল নারীরা। সবাই না। তাহলে সবাই কেনো বের হবে? সবাই বেরুলে লজ্জা করবে না?
কেনো শুধু একদল নারী একদল পুরুষই আন্দোলন মিছিল মিটিং করবে? আর আমরা বাসায় ফ্যানের নিচে বসে ফেইসবুকে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করবো। কমেন্টে লিখবো সবারই আন্দোলন করা উচিত, এ কোন দেশে বাস করছি ইত্যাদি! অনেক মা ভাবেন, না আমার মেয়েকে আমি আন্দোলনে দেবো না। আমি আমার বুক খালি করতে চাই না। মা হিসেবে উনার চিন্তা সুন্দর। হয়তো দুদিন পর আপনার সেই মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে আপনার বুক খালি করবে তখন কি হবে! শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করা আর ধর্ষিতা হয়ে মৃত্যুবরণ করা নিশ্চয়ই এক না!
৭১ এ যদি এ যদি এত বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায় তাহলে এখনকার যে ধর্ষক গোষ্ঠী নিশ্চয় তাদের চেয়ে বড় না। হয় তো এখন গা বাঁচানো ভাব নিয়ে আমরা থাকতে পারছি কিন্তু দু’দিন পর আমার আপনার পরিবারের সাথে নোয়াখালীর মতো কাহিনী ঘটলে কি পারবো এ রকম বসে থাকতে চিন্তা করুন তো?
শুধু সরকারকে দোষ দেই এটা করছে না, ওটা করছে না। আসলে আমরা সবাই কি নিজের জায়গায় সব করে ফেলছি? আমাদের কি করার আর কিছুই নেই? প্রশ্নগুলো কিন্তু থেকেই যায়!
বুঝলেন কেনো আমরা স্বার্থপর। আসুন, সবাই এক হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ি। আমার আপনার মা, বোনকে সুন্দর, সেইফ একটি দেশ ও জাতি উপহার দিই।