ঘড়ির কাটায় কাটায় রাত একটা। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। জানালার পর্দা তুলে বাহিরে তাকালাম। হঠাৎ ওপাশে মোবাইলে রিং হচ্ছে, এত রাতে? আমি অবাক!
ফোন রিসিভ করতেই এক তরুণীর কাঁদো কাঁদো কন্ঠে শোনা গেল, ভাইয়া, আমার আম্মুর জন্য এক ব্যাগ এবি নেগেটিভ ব্লাড দরকার, ঘন্টা খানেকের মধ্যে।
কোথায় লাগবে? রোগীর সমস্যা কি? কিংবা সে সঠিক নাম্বারে ফোন দিয়েছে কি না তা নিশ্চিত না হয়েই লাইনটা কেটে দিল।
ভেবে চিন্তে, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বরং আমিই কল দিলাম। কলটা রিসিভ করে আবারো সেই একই সুরে বলল, ভাইয়া, কল দিতে দিতে ফোনের ব্যালেন্সও শেষ!
সবকিছু জিজ্ঞেস করতেই বলল, ভাইয়া, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল বরিশালে লাগবে এবং ঘন্টা খানেকের মধ্যেই। না হয় আম্মুকে বাঁচানো যাবে না! সমস্যা মারাত্মক রোড এক্সিডেন্ট।
আমার কাছে ডোনার ম্যানেজ ছিল। তাড়াহুড়ো করে ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ করছেন সে। আমাদের বাড়ি দুমকিতে, বরিশাল যেতে দেড় ঘন্টা লেগে যাবে।
আকাশটা মেঘলা তাও এতক্ষণ খেয়াল করিনি, হঠাৎ অন্ধকার আরো বেড়ে গেল।
শুরু হয়ে গেল মুষলধারে বৃষ্টি, সে কী বর্ষণ!
তবু ছাতা, টর্চলাইট, মোবাইল আর মোটরসাইকেল ম্যানেজ করে ডোনারের বাড়িতে উপস্থিত। এদিকে সন্ধ্যা থেকেই জ্বর, কাশি ও প্রচন্ড মাথা ব্যথা ডোনারের।
কয়েকজন বন্ধুর কাছে কল দিলেও, কেউ রিসিভ করেনি, এদিকে আমি আর মোটরসাইকেল ড্রাইভার বৃষ্টিতে ভিজে পুরো খারাপ অবস্থা।
একটু পরে মোটরসাইকেলের ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল, রক্তের গ্রুপ কী? আমি বললাম, এবি নেগেটিভ।
ড্রাইভার বলল চলেন, বরিশালে ডোনার আছে পরিচিত দেয়া যাবে। তোরজোড় করে, বৃষ্টিতে ভিজে দেড় ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল পৌঁছালাম, কিন্ত এবারের ডোনার মিসিং, ডোনারের গ্রুপ হয়ে গেল এবি পজেটিভ।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার রক্তের গ্রুপ কী? পরীক্ষা করেছেন?
উনি বলল না, তবে দেখতে পারি একটু পরিক্ষা করে, ড্রাইভারের রক্তের গ্রুপও মিলল না।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন, রোগীর স্বামী, ভাই ও দেবর। তাদের বললাম আপনাদের কারোর গ্রুপ জানা আছে রক্তের? উত্তর দিল রোগির দেবর, আমার জানা নেই!
শেষে উনাকে পরীক্ষা করে দেখা গেল, ওনার ব্লাড গ্রুপ মিলে গেছে, উভয়েরই এবি নেগেটিভ! আলহামদুলিল্লাহ, উনি ব্লাড দিয়েছিলেন সেদিন এবং সুস্থ হয়ে উঠেছিল একজন মা।