সহোদর
দুঃখ
দুরুহ ছিল না কিছু, তুমি চাইলে থামিয়ে দেয়া যেতো সময়। এক জীবন সে তো যৎসামান্য ব্যাপার, তুমি চাইলে বকের মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে পরিদর্শন করা যেতো মহাবিশ্বের চোখ। দুঃখ আমার প্রিয় এক সহচর। ঝিনুকের খেসের মতো জীর্ণ বুক আজ দীর্ঘশ্বাসে ভরা। দুঃখ এক কঠিন শিল্প, আমাকে,তোমাকে বদলে দেয়।
সুখ
পরিত্যক্ত জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুর্বর এই বুকে একদিন এক রমণী পরম আহ্লাদে বিলি কেটে বলেছিলো, কৃষক এ বছর তোমার সুখ হবে
সেদিন থেকে বুক আমার শস্যাগার। কবিতার স্তবক, মুগ্ধতার পসরা শ্লোক।
ভেতরের স্বর
হৃদয় যে ছিলো বুঝতে পারিনি
শুষ্ক মৃত্তিকায় রয়ে গেছি একা
নিজেকে এখন রাখবো কোথায়
আমি আর মেঘ অবিভক্ত প্রেম
সারাদিন ঝরে গেছি মাটি অভিমুখে
সকলে বলেছে শিলাবৃষ্টি, পিরামিড, কঠিন পাথর
কোনোদিন ঝরিনি জলতাপ সুখে
তফাৎ এইটুকু পাথর আর জল
বাহিরে সহজ আমি ভেতরে অনল
তুমি ছুঁয়ে দিলে
পাথুরে এই বুকে কেউ কখনো ফলাতে পারেনি প্রেমশস্য, মরসুমি ফুল
তুমি ছুঁয়ে দিলে ফসলি হয়ে ওঠে অনুঢ়া বুক
তুমি কি বন মননের চাষী?
তুমি ছুঁয়ে দিলে কংক্রিট সড়কে ফোটে বোধের গোলাপ
জেগে ওঠে লুব্ধ চোখ
তুমি ছুঁয়ে দিলে অসভ্য নগরী হয়ে ওঠে ডানয়ূবের শান্ত ছবি
থমকে দাঁড়ায় আগুনের সহিংসতা
বিক্ষোভের বদলে পথেপথে বসে গান ও কবিতাপাঠের আসর
তুমি ছুঁয়ে দিলে নন্দিত হয়ে ওঠে খন্ডিত মেঘ
দোহাই আমাকে একবার হলেও ছুঁয়ে দাও
ইমেগ্রেশন
ইমেগ্রেশন শেষ হলেই চলে যাব
ঘর গেরস্থি, বাসন কোসন, আসবাবপত্র, সুরম্য প্রাসাদ, কাব্যটাব্য রেখে চলে যাব
ফুল পরাগের স্বপ্নিত সংসার, কল্পিত বাসর ছেড়ে চলে যাব
চৌদ্দপুরুষের ভিটা, পার্থিব প্রাচুর্য, যাপিত দিনের সুশান্ত সুখ রেখে চলে যাব
ঘুড়ি হলে বলতাম,লু-হাওয়ায় একবার উড়িয়ে দাও
কচুরিপানা হলে বলতাম, স্রোতের জোয়ারে ভাসিয়ে দাও
বৃক্ষ হলে বলতাম, কঠিন কুঠারে কেঁটে ফেল
আমি তো মানুষ
চারপায়া খাটে মৃতের মতো আর কতো শুয়ে থাকব বলো
ইমেগ্রেশন শেষ হলেই চলে যাব
এই দেখো, নেত্রযুগল মুদে আছি,তাকাব না
প্রতিবাদের হাত দু’টোও গুটিয়ে নিলাম
ইমেগ্রেশন শেষ হলেই চলে যাব
চলে যাবো অনন্তের পথে