জমে থাকা স্মৃতি
অর্ণব মনে পড়ে ব্রহ্মপুত্রেরতীর
মনে পড়ে হিজল গাছ কদম ফুল—
মনে পড়ে পিতামহীর মিঠা ক্ষীর
মনে পড়ে লাল শাদা জামরুল—
মনে পড়ে বসে থাকা নিষণ্ন পাখি
মনে পড়ে শিউলির মৃদু মৃদু ঘ্রাণ—
মনে পড়ে ছেলেবেলার ডাকাডাকি
মনে পড়ে মকতবে দেয়া মুষ্টি দান—
মনে পড়ে দাদার ঐহিক কথকতা
মনে পড়ে জেঠির পিঠার রাতি—
মনে পড়ে আমাদের স্বাধীনতা
মনে পড়ে শিশু খোঁজা আতিপাতি—
মনে পড়ে আব্বার অর্থ রোজি
মনে পড়ে কষ্টের উষা আর রাত—
মনে পড়ে পুষে রাখা তৃণভোজী
মনে পড়ে মকতবের মুগ্ধ প্রাত—
মনে পড়ে কৈশোরে থাকা নির্দল—
মনে পড়ে বন্ধুরা কেমন নির্মল।
মায়াটান
হঠাৎ একটি সবুজ পাতা ঝরে পড়ল
ব্রহ্মপুত্রেতীরে শরতের শাদা কাশ—
রোদের তাপে শুভ্রতা ঝেঁকে ধরল
নদের উজান ডাঙা তার আশপাশ—
সবুজ পাতার বোটা ক্ষয়ে যাওয়া
যেন ফুরিয়ে যাওয়া তার অভিমান—
সময়ে ঝাপটে ধরে বৃক্ষ–হাওয়া
খুলে দেয় ঝরাপাতার অভিজ্ঞান—
বৃক্ষের ভাষা যেমন পল্লব বোঝে
বুঝে তার শিকড় কতটুকু গভীর—
তোমার মনে মন প্রেয়সী খোঁজে
ঝরাপাতার পিঠে আলো রবির—
ঝরাপাতা যেমন একাকী বৃক্ষ শূন্য—
তুমি ছাড়া আমার হয় নাকো পুণ্য।
দুঃখ বিলাস
ব্রহ্মপুত্রেরতীরে তোমার কত চঞ্চলতা
খলখল করে তোমার কত মৃদু হাসি—
ফেলে আসি কত চাপা দেয়া নিরবতা
কত স্মৃতি আজ পুরোনো সর্বনাশী—
কদম কেয়া বেলি ফুলের প্রস্ফুটনে
মুগ্ধ তুমি কেমন যেন আজ আনমনা—
ভুলি কী করে তুমি হয়ে ওঠো খনা
দুখ নেমে আসে কেবল সুখ মেহনে—
তুমি যেমন চঞ্চল চড়ুইভাতি রাতে
ঠিক জোছনায় মেলে দেয়া আলো—
তোমার নয়ন দেখি কোকিল কালো
রাত নামে ভোরে প্রেমের মৃদু নাতে—
সুখের প্রদীপ তাপে আলো জ্বেলে—
কেবলই স্মৃতি সুখ এসেছি ফেলে।
পোড়া ক্ষত বু
বল কত গ্লানি মোচনের পর
তোমার ব্রহ্মপুত্রেরতীরে—
তবু করবে আমায় পর
স্মৃতিটুকু আমাকে ঘিরে—
কত স্বর্ণরেণু ভেঙে তুমি
গলাবে রূপার ঠুনকো নথে—
অন্ধকার তোমারই পথে
সঞ্জিবনী কী তোমার ভূমি?
নিরুত্তর তোমার মুখ
কেমন পাংশুটে গুমোট—
কেবলই দুখের পর দুখ
নড়ে না নিশ্চুপ দুঠোঁট—
দুখের পোড়া ক্ষত বুকে—
তোমার মুখ দাও এঁকে।
কৈশোরের স্মৃতি ডাকে
মনে পড়ে আতাফুল ছিঁড়া দিন মনে পড়ে
মনে পড়ে ডাবে ভেজা শীতল ঠোঁট—
মনে পড়ে কাঁচা আমের ঘ্রাণ মনে পড়ে
মনে পড়ে বন্ধুত্বের নিরেট জোট—
মনে পড়ে মারবেল খেলাটা মনে পড়ে
মনে পড়ে পুকুরের ডুবুরি উড়া হাঁস—
মনে পড়ে কোঁচড় ভরতি ফুল মনে পড়ে
মনে পড়ে শরতের শাদা শাদা কাশ—
মনে পড়ে কোকিলের গান মনে পড়ে
মনে পড়ে দোয়েলের দুপুরের শিস—
মনে পড়ে ঘুঘুর ফেঁসে যাওয়া মনে পড়ে
মনে পড়ে বকের খেই হারানো বিষ—
মনে পড়ে গাছের নীচে রাসুলের গান—
মনে পড়ে কার কণ্ঠে নেকের আজান।
আষাঢ়ি রাত জানে
আষাঢ়ি রাত জানে ব্রহ্মপুত্রের কত জল
কত পাখির মৈথুনে ডুবে যায় সূর্য—
কিছু পাখির পেখমে উড়ে বেদনার ছল
মোহিত করে কবি কেমন জানে তূর্য—
আষাঢ়ি রাত জানে মেঘ বৃষ্টির ভাষা
জানে জল গড়ানির বিস্রস্ত কথা—
বৃষ্টির ফোঁটা মাখে পেচানো লতা
অশ্রুতে ভাঙে কার চোখের আশা—
আষাঢ়ির রাত, জল বৃষ্টির নাচন দেখে
ঢলে ঢলে নদ হয় জলে টইটম্বুর—
আষাঢ়ি রাত যেন যায় ডেকে ডেকে
আমি মেঘে মিশে আছি নই অত দূর—
আষাঢ়ির অথই জল প্রেম প্রেম টানে—
প্রিয়া তোমাকে কেবলই কাছে আনে।