বিদগ্ধ নগরী
বাংলার প্রতিটি নগরী আজ বিদগ্ধ
দেহের প্রাণগুলি ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে,
শকুনরূপী মানুষেরা খুবলে খুবলে ছিঁড়ে নিচ্ছে বিষন্ন অন্তরাত্মাগুলিকে,
নিঃশ্বাস ফেলার স্থানটুকু আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
দস্যুর ন্যায় ছুরি চালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে মেহনতি মানুষের জীবন,
খাবার চাই, খাবার চাই, খাবার চাই!
চারদিকে খাবারের সন্ধানে ছুটে চলেছে মানুষ
একটুখানি খাবার, একমুঠো ভাত আর এক মুঠো ডাল,
মানুষ ধুঁকছে অসহায় আধমরা হরিণের মতো
বাঁচানোর কেউ নেই!
যেখানে খাবার সেখানেই নরপিশাচের হানা,
কেউ পায়, কেউ পায় না,
লুটেরা আজ বেনামি এক মাদকের নেশায় উন্মাদ।
রক্তচুষা বাদুড়ের মতো খেয়ে নিচ্ছে সবকিছু,
হন্যে হয়ে যেন ছুটোছুটি করছে মানুষ
একটুখানি খাবার,একমুঠো পরিমান খাবার,
কবে শেষ হবে এই দুর্ভোগ?
আদৌ কি শেষ হবে?
একদিন হয়তো শেষ হবে এই অত্যাচার
হাতে তুলে নিবে মানুষ সত্যের ঝান্ডাটি,
সত্যের পতাকা নিয়ে জয় করবে দেশ।
প্রতিহত হবে মিথ্যা-ভণ্ডামির অহংকার
চূর্ণবিচূর্ণ হবে বিষাক্ত নগরীর বিষাক্ত দেয়াল,
ভূলুন্ঠিত হবে অন্যায়ের চরম-পর্যায়
চির বিদায় নিবে মানুষ নামের অমানুষ গুলি।
অনধিকার চর্চা
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বো তোমার বুক পাঁজরের উঠোনে,
মোলায়েম হাতের স্পর্শে ভেঙ্গে যাবে তোমার কঠিনতর মন।
অনধিকার চর্চা করতে চাই হে প্রিয়তমা,তোমার ঐ বাঁকানো হৃদয়ের জানালায় ।
অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে চাই আমি,
কারণ, তুমি তো চাও না আমায়,
তাই আমি আজ অনধিকার চর্চায় লিপ্ত হবো,
গুঁড়িয়ে দেবো তোমার সকল মেকি ভাবনাগুলি, যা আমাকে ঘিরে সৃষ্ট।
কেটে দিবো তোমার জড়তা-সংকোচ,
আমার জাহাজ নোঙর করবো তোমার কোমল, নীলাভ ঠোঁটের প্রান্তরে।
স্পর্শ করো আমায়,দেখবে কতটুকু উষ্ণতা অনুভূত হয়,
হাতে হাত রাখো আমার, দেখবে কি চিরন্তন সুখে ডুবে যাচ্ছ ।
ঠোঁটে ঠোঁট মিলাও, দেখবে অমৃত সুধা পান করছো।
হিমাদ্রিকে
তুমি মহুয়ার মাতাল হাওয়ার কোনো বস্তু নও,
নও তুমি আঁধারের রাতে অদূরে জেগে থাকা কোনো পতঙ্গভুক ।
নও তুমি মহাজাগতিক কোনো সামান্য লক্ষ্যবস্তু,
আমার কাছে তুমি দোলনচাঁপা ফুলের গন্ধযুক্ত অমায়িক নারী।
তুমি ছড়িয়ে দাও কোমল দেহ, শূন্য ভুবনের শেষ সীমানায়,
তুমি এক আলোকবিন্দু কণা, যার দিকে সপ্রতিভ চেয়ে থাকি।
তুমি অনলে পুড়ে তৈরি হওয়া সর্বশেষ হীরকখণ্ড,
অথবা শিশিরভেজা ভোরের একগুচ্ছ জলকণা।
তুমি হাজারো তারার মাঝে একটি শুকতারা,
আর চৈত্র মাসের শুভ্র, নির্মল চৈতালি হাওয়া, যা বয়ে চলে চারিদিক।
তুমি গগনতলে উড়ে বেড়ানো সোনালী ডানার চিল,
যে মিশরের নেফারতিতিকেও হার মানায়।
তুমি ভাঙ্গা আঙুলে ঝরে পড়া লাল রক্তের বেদনা,
আর শেষ বিকেলের সুরভিত আলোর মেলা।
তুমি সাত সাগরের ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া কোনো এক দুর্লভ বস্তু,
তুমি চুম্বকের মতো টেনে নাও আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলিকে।
তুমি স্বাধীন দেশে পরাধীন এক নারী,
বৃষ্টির জলে ভেজা কোমল মহিমায় জড়ানো এক নারী,
তুৃমি দুর্বার, তুমি দুর্দমনীয় ধোঁয়াশায় বেড়ে ওঠা অনন্য এক মানবী।
তুমি যদি চাও
তুমি যদি চাও, পাড়ি দিতে পারি কালাহারি মরু প্রান্তর,
তুমি যদি চাও, ঘুরে আসতে পারি অসীম বরফে ঢাকা অন্তহীন গভীর প্রতিকুল রাজ্য এন্টার্কটিকা।
তুমি যদি চাও, চলে যাব মহাবন আমাজনের কেন্দ্রবিন্দুতে,
যেখানে নেই কোনো জীবনের সজ্ঞা,
তুমি যদি চাও, পামির মালভুমি ধেয়ে ধেয়ে ঘুরে বেড়াব নিঃসংকোচে।
তুমি যদি চাও, আলেকজান্ডারের মতো আবার জয় করবো পুরো বিশ্ব,
তুমি যদি চাও, ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি ঘুরে আসবো, যেখানে রয়েছে জলন্ত অগ্নিকুন্ড।
তুমি যদি চাও, আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা ঢেউ এ ভেসে বেড়াবো অবলীলায়,
তুমি যদি চাও, হিমালয়ের পর্বতশ্রেণীর প্রতিকুল পরিবেশে মরে যাব একমুহূর্তে।
তুমি যদি চাও, হেলেন অফ ট্রয়কে ছেড়ে দিতে পারি নিশ্চিন্ত-মনে,
তুমি যদি চাও, মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ডুব দিবো ভয়হীন।
তুমি যদি চাও, ডেড সি এর লবণাক্ত পানি পান করে হবো মৃত্যুপথ-যাত্রী,
তুমি যদি চাও, গেলাসে গেলাসে গিলে খাবো বেদনার ফুল।
তুমি যদি চাও, বৃষ্টি হয়ে নেমে যাবো ভোরবেলায়,
আরও পারবো সিন্দাবাদের জাহাজ নির্বিঘ্নে ভাসিয়ে নিরুদ্দেশ হতে।
তুমি চাইলেই হতে পারি কঠিনতর হীরকখন্ড,
আবার, হতে পারি এক গুচ্ছ জীবনের ছন্দ,
তুমি যদি চাও তবে হয়েই যাবো আমি পরপারের প্রবাসী ।
আমার ভিতর আমি
নিদ্রা-কাতর এক মানুষ আমি
মাঝেমধ্যে আমার ভিতর আমি ঘুমিয়ে পড়ি!
এ সভ্যতা আমার ভালো লাগে না,
এই জগতের কিছু কৃত্রিম মোহ আমার জন্য না
আমার জন্য কেবল এই সোনা-ফলা মাটি,সবুজ-পাতার সারি, পাখির ডাক, এসবই যেন কালপরম্পরায় জমে থাকে।
আসমান আর মহাশূন্যে আলোর ঢেউ আমার জন্য
প্রশান্ত মহাসাগরের সিল মাছ আমার জন্য,
নীলনদের স্বচ্ছ-নীল জলের জন্য পাগল আমি।
আমি এসবের মধ্যে আমার আপাদমস্তক ডুবিয়ে দেই,
পান করি অনন্য এক রস, যে রসে পূর্ণ সকল কিছুর আস্বাদ।
আমার আমিত্বকে হারিয়ে ফেলি মৃন্ময়ীর প্রতিটি নগরীতে,
দিগন্ত-বিস্তৃত খোলা মাঠের উপর দিয়ে হেঁটে যাই
তারপর আবার আমি ঘুমিয়ে পড়ি নিজের ভিতর!
বারবার স্বপ্ন দেখি আর হোঁচট খাই,
রাত যেমনি দিনকে ঢেকে দেয়, তেমনি আমি নিজেকে ঢেকে দেই সবিস্ময়ে!
আমি ভ্রমন পিপাসু হয়ে ঘুরে বেড়াই
আমার আত্মাটাকে হাতে নিয়ে চক্কর দেই একটু-আধট,
তারপর আবার আমি আমার ভিতর ঘুমিয়ে যাই!